--

--

--

--

  • More Options
  • Sign Up
Saswata Saha
May 28, 20226 min read

আজ সাবিত্রী চতুদর্শী ব্রত

চলতি বছরে ২৮মে (১৩ জৈষ্ঠ্য) শনিবার অর্থাৎ আজ সাবিত্রী চতুর্দশী ব্রত পালন করা হবে।
হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী বিবাহিত মহিলারা বট সাবিত্রী ব্রত-এর দিন স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সন্তান লাভের জন্য এই উপাসনা করেন। প্রতিবছর এই উৎসবটি জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যার দিন উদযাপিত হয়। এই বছর, বট সাবিত্রী ব্রত ২৮ মে পালিত হবে। উত্তর ভারতে এই ব্রত খুবই জনপ্রিয়। এটা বিশ্বাস করা হয়, যে মহিলা মন দিয়ে এই ব্রত পালন করেন তাঁর সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়।

চলতি বছর ২৮ মে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিন তৈরি হচ্ছে মহাযোগ। কারণ একই দিনে পড়েছে সোমবতী অমাবস্যা আর বটসাবিত্রী পুজো। প্রতি বছর কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে বটসাবিত্রীর পুজো করা হয়। এইদিনে অমাবস্যার ব্রত পালন করার পাশাপাশি অনেকেই উপবাসও রাখেন। তবে বট সাবিত্রী পুজোর ব্রত পালন করা কিছুটা কঠিন । কারণ এই পুজোর মাধ্যমে স্ত্রী তাঁর স্বামীর দীর্ঘ আয়ু কামনা করে। হিন্দু বিশ্বাস মতে বট সাবিত্রী পুজো করলে স্ত্রী যেমন স্বামীর ভালোবাসা পায়। তেমনই প্রেমিকা তাঁর আকাঙ্কিত প্রেমিকের মন পায়। তাই মহিলাদের কাছে এই ব্রত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

• বট সাবিত্রী ব্রতর গুরুত্ব :-
এই ব্রত প্রত্যেক দম্পতিকে বার্তা দেয়, জীবনের যেকোনও পরিস্থিতিতে সঙ্গীর হাত ছেড়ে না যাওয়ার। একজন পতিব্রতা স্ত্রী তাঁর স্বামীকে যমরাজের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা রাখেন। এই কারণে বিবাহিত মহিলাদের পক্ষে এই ব্রত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটিতে স্বামীর স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনার পাশাপাশি মহিলারা সন্তানপ্রাপ্তির আশীর্বাদও লাভ করেন।

• বটসাবিত্রী পুজোর প্রয়োজনীয় সামগ্রী :-
জলভরা ফুলদানি
কাঁচা সুতো
মেরুন সুতো
সিঁদুর
মিষ্টি
ফুল
ধূপকাঠি
লাঠি
ফল
বাঁশের ঝুঁড়ি
বাঁশের পাখা
ভেজানো ছোলা

• পূজা বিধি :-
১) যারা ব্রত রাখেন তাদের চতুর্দশীর দিনটিতে আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। খাবারে পেঁয়াজ-রসুনও ব্যবহার করবেন না।
২) পূজার দিন মহিলারা ব্রাহ্ম মুহুর্ত বা খুব ভোরে উঠে ঘর পরিষ্কার করুন।
৩) গঙ্গার জলে স্নানের পরে ব্রত রাখা শুরু করুন।
৪) পরিষ্কার বস্ত্র পরুন।
৫) সর্বপ্রথমে সূর্যদেবকে জল অর্পণ করুন।
৬) বাঁশের ঝুড়িতে পূজার সমস্ত সামগ্রী রাখুন এবং পূজার ডালি নিয়ে বাড়ির নিকটবর্তী বট গাছের কাছে যান এবং পূজা শুরু করুন।
৭) সেখানে জল অর্পণ করুন। এবার ফল, ফুল এবং পূজার সমস্ত সামগ্রী দিয়ে বট গাছের পূজা করুন।
৮) বটবৃক্ষকে পূজা দেবার পর গাছকে ৫, ৭, ১১ বা ২১ বার প্রদক্ষিণ করুন স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে। কেউ বা পাঠ করেন সাবিত্রী সত্যবানের পাঁচালি।
৯) এরপরে অবশ্যই বট সাবিত্রী ব্রতকথা শুনুন।
১০) সারাদিন উপবাস রাখুন এবং সন্ধ্যায় আরতির পরে ফলাহার করুন।
১১) পরের দিন প্রতিদিনের মতো সাধারণ পূজা করুন এবং ব্রত ভঙ্গ করে ব্রাহ্মণদের দান করুন এবং তারপরে খাবার গ্রহণ করুন।

• বট সাবিত্রী ব্রতকথা :-
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, সাবিত্রী ছিলেন অশ্বপতির কন্যা। সত্যবানকে সাবিত্রী নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন। সত্যবান কাঠ কাটতে বনে যেতেন এবং সাবিত্রী তাঁর অন্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করার পরে সত্যবানের পিছনে পিছনে বনে যেতেন। একদিন কাঠ কাটতে গিয়ে সত্যবান অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তারঁ মাথা ঘুরে যায় এবং সে গাছ থেকে নেমে নীচে বসে পড়ে। সেই সময়ে মহিষে চড়ে যমরাজ সত্যবানের প্রাণ নিতে আসেন। সাবিত্রী তাঁকে চিনতে পেরে বলেন যে, সত্যবানের প্রাণ না নিতে। যমরাজ তা প্রত্যাখ্যান করেন, কিন্তু সাবিত্রী তাঁর জায়গা থেকে সরেননি। সাবিত্রীর পতিব্রতা ধর্ম দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে যমরাজ সাবিত্রীকে বরদান স্বরুপ অন্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন এবং সাবিত্রীকে শত পুত্রের জননী হওয়ার আশীর্বাদ করেন এবং সত্যবানের প্রাণ ফিরিয়ে দেন।
সাবিত্রী বট গাছের নীচেই নিজের পতিব্রতা ধর্মের ফলে তাঁর মৃত স্বামীকে জীবিত করেছিলেন। এই কারণে, এই ব্রত 'বট সাবিত্রী ব্রত' নামে পরিচিত। এই ব্রত বটবৃক্ষের পুজোর সাথে সম্পর্কিত। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, সেই থেকেই বিবাহিত মহিলারা এই দিনটিকে বট অমাবস্যা হিসেবে উপাসনা করেন।

💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗💗

• বট সাবিত্রী পুজো কেন পবিত্র জানুন :-
সাবিত্রী আর সত্যবানের গল্পের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বট সাবিত্রী পুজোর মিথ। সাবিত্রী আর সত্যবানের প্রেমকাহিনি এখনও মিথ ভারতে। সাবিত্রী আর সত্যবানের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু নারদ বলেছিলেন সত্যবানের আয়ু খুব কম। তখন সাবিত্রী নারদের কাছে সত্যবানের আয়ু ভিক্ষে করেন। কিন্তু নারদ তাঁকে বট গাছের কাছে যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু বট গাছের কাছে গিয়েও সাবিত্রী সত্যবানকে বাঁচাতে পারেননি। কিন্তু স্বামীকে বাঁচাতে বট গাঠের আর্শীবাদ নিয়ে তিনি যমরাজের পিছনে ধাওয়া করেন। সাবিত্রীর পতিভক্তির কাছে হার মানেন যমরাজ। শেষ পর্যন্ত যমরাজ ফিরিয়ে দেন সাবিত্রীর স্বামী সত্যবানকে। তারপর থেকেই আমৃত্যু স্বামীর সঙ্গ পাওয়ার জন্য ভারতীয় মহিলারা বট সাবিত্রীর ব্রত পালন করেন নিজেদের স্বামীর মঙ্গল কামনায়। হিন্দুশাস্ত্র মতে এই ব্রত পালন করলে স্বামী সুখও পাওয়া যায়। স্বামীর ভালোবাসাও পাওয়া যায়।

• পৌরাণিক কাহিনীর বিস্তারিত বর্ণনা :-
বৈশাখ মাসের সংক্রান্তি অথবা জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রারম্ভিক কালে বট সাবিত্রী চতুর্দশী ব্রত পালন করা হয়। এই দিন সাবিত্রী, সত্যবান ও ধর্মরাজের পূজা করা হয়। বলা হয় এই ব্রত পালন করলে বৈধব্য যন্ত্রনা ভোগ করতে হয় না। সধবা মহিলারা এই ব্রত পালন করে থাকেন। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।

এক কালে মদ্র নামে এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের রাজা অশ্বপতির কোনো সন্তান না হওয়ায় সে পত্নীর সাথে সাবিত্রী দেবীর আরাধনা শুরু করেন। চৌদ্দ বছর ব্রত পালন করে ব্রত উদযাপনের সময় তাঁদের আরাধনায় খুশি হয়ে সাবিত্রী দেবী তাঁদের আশীর্বাদ করেন যে তাঁদের সর্বসুলক্ষণাযুক্ত এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। কালের নিয়মে রানী মালবী এক অতীব সুন্দরী কন্যা সন্তান প্রসব করেন। দেবী সাবিত্রীর নামানুসারে তাঁরা মেয়ের নাম রাখেন সাবিত্রী। দেখতে দেখতে সাবিত্রী বড় হয়ে বিবাহযোগ্যা হয়ে ওঠেন। একদিন সাবিত্রী তাঁর সখীদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে শাল্ব দেশের রাজ্যচ্যুত রাজা দ্যুমৎসেনের আশ্রমে এসে হাজির হন। সেখানে রাজার পুত্র সত্যবানকে দেখে মনে মনে তাঁকে বর হিসাবে প্রার্থনা করেন সাবিত্রী।
এই সময় যখন মহামুনি নারদ অশ্বপতির সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন রাজা নারদ মুনির সামনে তাঁর কন্যাকে জিজ্ঞাসা করেন যে তাঁর কোনো পাত্র পছন্দ করা আছে কিনা আগে থেকে। উত্তরে সাবিত্রী সত্যবানের কথা জানান। অশ্বপতি তখন নারদ মুনি কে সত্যবান এর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে নারদমুনি জানান যে তিনি রাজা দ্যুমৎসেনের পুত্র। দ্যুমৎসেন তখন রাজ্যছাড়া এবং তাঁরা পতি পত্নী দুজনেই অন্ধ। আর সবচেয়ে বড় কথা তাঁদের পুত্র সত্যবান তাঁর বিয়ের ঠিক এক বছরের মাথায় মৃত্যু বরণ করবেন।
এই কথা শুনে অশ্বপতি সত্যবান এর সঙ্গেই নিজের কন্যা সাবিত্রীর বিবাহ দিতে রাজি না হলেও সত্যবতী সত্যবানকেই বিবাহ করবে বলে মনস্থির করেন। অগত্যা রাজা অশ্বপতি ভালো দিন দেখে সত্যবান এর সাথে সাবিত্রীর বিয়ে দেন। সাবিত্রী বনে সত্যবানের আশ্রমে এসে তাঁর অন্ধ শ্বশুর শাশুড়ির সেবাযত্ন করে সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন এবং মন দিয়ে সংসার করতে থাকেন। কিন্তু নারদ মুনির ভবিষ্যৎ বাণী তাঁকে মনে মনে বিচলিত করতে থাকে। যখন তাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি, তখন সাবিত্রী তিন দিন উপবাস থেকে ব্রত পালনের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। শ্বশুর শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে তিনি বনের মধ্যে যান এবং সত্যবানও তাঁর সাথেই বনের মধ্যে প্রবেশ করেন। এরপর সত্যবান ফল ও কাঠ সংগ্রহ করার জন্য বনের আরোও গভীরে প্রবেশ করেন আর তারপর সন্ধ্যে নামলে সত্যবান ক্লান্তি ও মাথা ব্যথার কারণে অসুস্থ হয়ে সাবিত্রীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। দেখতে দেখতে তাঁর দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে যায়। সেই দিন কৃষ্ণ চতুর্দশী থাকায় ঘন অন্ধকারে স্বামীর মরদেহ নিয়ে সাবিত্রী মাতা সাবিত্রীদেবীর নাম জপ করতে থাকেন আর তাঁর দেহ থেকে এক প্রকার জ্যোতি বিচ্ছুরিত হতে থাকে। তা দেখে সত্যবান এর প্রাণ নিতে আগত যমদূতেরা আশ্চর্য হয়ে যান এবং সত্যবান এর প্রাণবায়ু না নিয়ে যমালয়ে গিয়ে ধর্মরাজ কে সম্পূর্ণ ব্যাপারটি বিস্তারিতভাবে জানায়। এই দিকে ধর্মরাজ সত্যবানের প্রাণ বায়ু নিয়ে যাবার সময় দেখে সাবিত্রী তাঁর পিছনে আসছেন। ধর্মরাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ধর্মরাজের স্তব করতে থাকেন। তাতে খুশি হয়ে ধর্মরাজ তাকে তিনটে বর দিতে চান। সাবিত্রী তখন তাঁর অন্ধ শ্বশুর শাশুড়ির চোখের জ্যোতি, শ্বশুরের রাজ্য আর তাঁর বাবার একশত পুত্র হওয়ার বর প্রার্থনা করে ধর্মরাজের নিকট।
ধর্মরাজ খুশি মনে তথাস্তু বলে তাঁকে বর প্রদান করেন ও আবার চলতে থাকেন যমালয়ের উদ্দেশ্যে। চলতে চলতে তিনি দেখেন সাবিত্রী আবারও তাঁর পিছনে পিছনে আসছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে আবার তিনি ধর্মরাজের নাম জপ করতে থাকেন। আবার খুশি হয়ে ধর্মরাজ সাবিত্রীকে বর দিতে চান। সাবিত্রী তখন বলেন আমায় এই বর দিন যে সত্যবান এর ঔরসে আমার গর্ভে যেন শত পুত্রের জন্ম হয়। ধর্মরাজ তথাস্তু বলে চলে গেলে আবার তাঁর পিছনে সাবিত্রী কে দেখতে পান। তখন ধর্মরাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন কি ব্যাপার! সাবিত্রী বলেন “আপনি যে আমাকে সত্যবানের ঔরসে পুত্র হবার আশীর্বাদ করলেন, তাহলে আপনার ধর্ম রক্ষা পাবে কি করে? আপনি সত্যবান এর প্রাণ বায়ু ফিরিয়ে দিন আর আপনার ধর্ম রক্ষা করুন।”

এই শুনে ধর্মরাজ লজ্জায় পড়ে যান আর সত্যবান এর প্রাণবায়ু পুনরায় ফিরিয়ে দেন। এরপর সাবিত্রীর স্বামী সত্যবান জেগে ওঠেন। ওদিকে রাজা দ্যুমৎসেন এবং তার স্ত্রী জেগে সবকিছু দেখতে পান। তাঁর মন্ত্রী এসেও খবর দেয় তাঁদের শত্রুবিনাশ হয়েছে। রাজা রাজ্য ফিরে পায়। এইভাবে সাবিত্রী এই ব্রতের মাধ্যমে সবকিছু ফিরে পায় আবারও। তারপর এই ব্রতের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ধর্ম দিয়ে, সততা দিয়ে সাবিত্রী তাঁর স্বামীর জীবন রক্ষা করলেন, মৃত স্বামীর পুনর্বার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলেন। স্বামীর প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা তাঁকে অমর করে রেখেছে সতী নারী হিসেবে। পতিপরায়ন সতী নারীকে তাই লোকে এখনও বলে - "সতী সাবিত্রী"।

পুজোর পরিবার - Pujor Poribar

4