--

--

--

--

  • More Options
  • Sign Up
Saswata Saha
May 29, 20224 min read

ফলহারিণী অমাবস্যা

আসুন, ফলহারিনী কালিপুজো সম্পর্কে জেনে নিই......🌺

আজ ফলহারিণী অমাবস্যা। জ্যোতিষ এবং তন্ত্র মতে এই ফলহারিনী অমাবস্যার অনেক গুন আছে। এই পৃথিবীতে নানা রকম বাধা এবং বিপত্তি দূর করার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। বিশেষ ফলদায়ক এই তিথিতে বিশেষ বিশেষ তন্ত্র ক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং মোক্ষলাভ করা যায়।

জ্যৈষ্ঠ মাসের আমাবস্যায় হয় ফলহারিনী কালী পুজো, এমন দিনে বিভিন্ন অশান্তি, মাহামারী, বাধা, বিঘ্ন, থেকে মুক্তি লাভ করতে ফলহারিনী অমাবস্যার দিন মা কালীকে অর্পণ করতে হয় যেকোনও ফল। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে মাকে তুষ্ট করতে ফল দিয়েই তাঁর পুজো করতে হবে এই ফলহারিণী আমাবস্যায় জ্যৈষ্ঠমাসে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি নানারকম ফলের সময়ে ফল পাওয়া যায়। সাধক তাঁর ইষ্টদেবীকে বিভিন্ন ফল দিয়ে প্রসাদ নিবেদন করে থাকেন।

শুধু আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি গাছের ফল না, এই দিন মায়ের চরণে সাধকেরা তার কর্ম ফল অর্পন করে থাকেন মোক্ষফল প্রাপ্তির জন্য। কারণ এই মানব জীবন পাপ ও পূন্য এই দুই নিয়েই জীবন দুই নিয়েই কর্মফল। যেটা বেড়ে যায় মানব জাতি তখন সেই দিকেই আকৃষ্ট হয়ে যায়৷ তাই এই দিনেই মায়ের চরনে পাপ-পূন্যের ফল অর্থাৎ কর্মফল অর্পণ করতে হয় মোক্ষফল লাভের আশায় শাস্ত্রে বলা হয়, জীবনই সর্বস্ব। অর্থাৎ একদিকে ফলহারিণী যা সাধকের কর্মফল হরণ করেন। অপর দিকে কর্মফল হরণ করে সাধককে তাঁর অভীষ্টফল, মোক্ষফল প্রদান করেন।

বাঙালি জীবনে ফলহারিণী কালী পুজোর তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই দিনেই তাঁর স্ত্রী সারদা দেবীকে পুজো করেছিলেন জগৎ কল্যাণের জন্য। ১২৮০ বঙ্গাব্দে জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে তিনি দক্ষিণেশ্বরে আদ্যাশক্তি সগুণরূপের পুজো করেছিলেন। তিনি ফলহারিণী কালী পুজোর দিন শ্রীমা সারদাকে "ষোড়শীরূপে" পুজো করেছিলেন বলে আজও রামকৃষ্ণমঠ ও আশ্রমে এই পুজো 'ষোড়শী' পুজো নামে পরিচিত। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য এই নিয়মে পুজো করলেও এই দিনটিতে হিন্দু ধর্মাবলাম্বী মানুষ নানাবিধ ফল দিয়ে কালীর পুজো করে থাকেন।

কার্তিক মাসে দক্ষিণাকালীর পুজোয় সকলের সার্বিক কল্যাণ হয়। আর ফলহারিণী কালীপুজো করলে আমাদের প্রত্যেকের বিদ্যা, কর্ম ও অর্থভাগ্যের উন্নতি ঘটে। প্রেম-প্রণয়ে বাধা দূর হয়। দাম্পত্য সাংসারিক জীবনেও সুখশান্তি লাভ হয় ও সাধকের জীবনে মোক্ষফল প্রাপ্তি হয়।

জয় মা ফলহারিণী কালিকে নমোহস্তুতে।

শ্রীশ্রী ফলহারিনী কালী মায়ের মাহাত্ম্য ও কথা:-

উত্তর হাওড়ার ছোট্ট একটি এলাকার নাম সালকিয়া।এক সময় এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের পূর্ব পুরুষরা। তাদের জমিদারির আমলে বিশেষ কোনো পুজো হত না এই অঞ্চলে। পুজো বলতে ছিল জমিদার বাড়ির দুর্গোৎসব। বছরে ওই একটি বারের জন্য জমিদার দরজা খোলা হত অঞ্চলের মানুষদের জন্য। এই ভাবেই সুখে-দুঃখে দিন কাটত।
সেই সময়ে হঠাৎই একবার মহামারী দেখা দেয় চতুর্দিকে।অনেক মানুষ না খেতে পেয়ে অনাহারে মারা যেতে থাকে। অনেক মানুষ প্রাণরক্ষার জন্য এলাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকে। এই দিকে জমিদারও চিন্তায় পড়ে যান কীভাবে তিনি মানুষজনকে বাঁচাবেন এই ভয়াবহ মহামারীর কবল থেকে। ঠিক এমনই এক সময় মা মহামায়া কালীরূপ ধারণ করে স্বর্গ হতে মর্ত্যে নেমে আসনে। মা স্বপ্নাদেশ দেন।তিনি বলেন যে তাঁর ফলহারিনী রূপের পূজা করতে।তাহলেই দূর হবে সকল দুর্দশা।তিনি এও বলেন যে তাঁর পূজার জোগাড় তিনি নিজেই করবেন।
তিনি বলেন যে, ব্যানার্জী বাগান অশথ্বতলা সংলগ্ন পুকুর থেকেই উঠে আসবে তাঁর গয়না ও পূজার বাসনপত্র। নিয়ম মেনে পুজোর দিন ঠিক করা হয়। পূজার ঠিক আগের দিনই সেই পুকুর পুজো করে, একটি কাগজে যা যা গয়না ও বাসনপত্র লাগবে লিখে পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
পূজার দিন এলাকার বাসিন্দারা পুকুর ঘাটে যেতেই এক অলৌকিক ঘটনা লক্ষ্য করলেন। তারা দেখলেন পুকুরের ঘাট ভর্তি গয়না ও বাসনপত্র। জমিদারের কাছে খবর যায় ও তিনি নিজে এসে এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যান।
খুব ধুমধাম সহকারে পূজা করা হয় মা ফলহারিনী কালীকে। এবং এই পূজা করেই মহামারী কেটে যায়।
এখন এই সালকিয়া অঞ্চলে প্রচুর ছোটো বড়ো কালী পুজো হয়ে থাকে। এই এত পুজোর ভিড়ে মানুষ হয়তো ভুলেই গেছেন ফলহারিনী মায়ের কথা।তবে ব্যানার্জী বাগান সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোগে এই পুজো আজও হয়ে আসছে। পুজোর সঠিক বয়স জানা না গেলেও আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই পুজো।
ফলহারিনী কালী নাম হলেও এই পুজো প্রতি বছর ফলহারিনী অমাবস্যাতে হয় না কারণ পূর্বে যখন মহামারী দেখা দিয়েছিল তখন ফলহারিনী অমাবস্যাতে পুজো হয়নি । একটি শনিবার দেখে পুজো করা হয়েছিল। একমাত্র তখনই এই পুজো ফলহারিনী অমাবস্যা তিথিতে হবে যখন ফলহারিনী অমাবস্যা তিথি শনিবার হবে।আর তা না হলে কৃষ্ণপক্ষের একটি শনিবার দেখে পুজো করা হবে।
উত্তর হাওড়ার সালকিয়ার ব্যানার্জী বাগান লেন সংলগ্ন অশথ্বতলা কালী মন্দিরের ফলহারিনী মায়ের সঠিক বয়স জানা না গেলেও, আনুমানিক বয়স ২৫০ থেকে ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন ধরা হয়।
মায়ের পুজোতে পশু বলি নিষিদ্ধ। বলি দেওয়া হয় শুধুমাত্র ছাঁচিকুমড়ো।
গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ির নারায়ণ শিলা, মঙ্গল চন্ডীর ঘট ও বলির খাঁড়া বছরে একটি বারের জন্য বাড়ির বাইরে বার করে ব্যানার্জী বাগান অশথ্বতলা কালী মন্দিরে নিয়ে আসা হয় শুধুমাত্র মায়ের পূজার জন্য। জমিদার বাড়ির খাঁড়া ছাড়া মায়ের পূজার বলি দেওয়া যাবে না, এটাই নিয়ম।
যেহেতু মায়ের নাম ফলহারিনী কালী তাই, ফল ছাড়া পূজা দেওয়া চলে না। একটি মাত্র ফল হলেও তা মায়ের কাছে নিবেদন করতে হয়।এই কালী মন্দিরের নিয়ম অনুযায়ী নির্জলা উপবাস চলে না এই পুজোতে। কোনো মানুষ যদি মানসিক পূর্ণ করার জন্য দন্ডি খাটেন তাহলে তিনি জল গ্রহন করতে পারেন।
সাধারণত আমরা অনান্য কালী পুজোতে দেখে থাকি যে, পূজা শেষে ভোরবেলা বিসর্জন ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু মা ফলহারিনী কালীকে ভোরবেলা বিসর্জন দেওয়া হয় না। পরের দিন রাত্রি বেলা বিসর্জন দেওয়া হয়।
ব্যানার্জী বাগান সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোগে এই পুজো আজও হয়ে আসছে। পুকুর থেকে গয়না ও বাসনপত্র না উঠলেও আজ মায়ের নিজস্ব গয়না ও বাসনপত্র সবই হয়ে গেছে। প্রতিটি নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে মাকে প্রত্যেক বছর পূজা করা হয়ে থাকে।

পুজোর পরিবার - Pujor Poribar

5