মেদিনীপুরের প্রাচীন পুজো যা ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এবং জাতিভেদ প্রথার বিরোধীতার প্রেক্ষাপটে শুরু হয়েছিল। পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু বিশিষ্ট মানুষ। পেডি হত্যার নায়ক বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্তের পিতা অক্ষয় কুমার দাশগুপ্ত এবং কর্ণেলগোলার কমিশনার( তদানীন্তন ২ নং ওয়ার্ড) সতীশ চন্দ্র আঢ্য এবং তার ভাই যতীন্দ্র নাথ আঢ্য, অতুল চন্দ্র বসু, হরিপদ পিরি, গঙ্গা প্রসাদ মুরারকা, জিতেন্দ্র নাথ বোস, হেম চন্দ্র দে দালাল, নারায়ণ প্রসাদ ভকত।

কাশীর পন্ডিতদের বিধান অনুযায়ী যে দেবী মূর্তি গঠন হয়েছিল তা অক্ষুন্ন রইল বছরের পর বছর। সেই পন্ডিতদের মত অনুযায়ী এবং মহাদেবীর ধ্যান মন্ত্র মেনে দেবীর গাত্র বর্ণ হল অতসী পুষ্পের মত গাঢ় হলুদ। নাকে দেওয়া হল তিলক। বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল কেবল স্পর্শ করলো মহিষাসুরের স্কন্ধ। আর দক্ষিণ পদ স্থাপিত হল শ্বেত সিংহের উপর। মহাদেবীর মাথায় মুকুটের আড়ালে রইল জটা। আর মুকুটে খচিত হল চন্দ্র। হাতে শাঁখা পলা। গলায় মাটির তৈরী শ্বেত অপরাজিতা আর নীল পদ্মের মালা। বাম হাতে নাগ পাশের সাথে মা ধরলেন মহিষাসুরের কেশ। সিংহের মাথায় কেশরের আড়ালে দেওয়া হল খড়্গ বা শিং। মহিষাসুরের গায়ের বর্ণ সবুজ আর সে মহিষের কাটা গলা থেকে অর্ধেক বেরিয়ে রয়েছে। আর তাই তার গায়ে জড়ানো রয়েছে মহিষের নাড়ি ভুঁড়ি। সেই অবস্থায় সে মায়ের সাথে যুদ্ধরত।
একচালার প্রতিমার বৈশিষ্ট অনুযায়ী সমস্ত দেবতারা রইলেন চালচিত্রে।
মহাদেবীর ডান দিকে ধনদায়িনী দেবী লক্ষ্মী লাল পদ্মের উপর ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিতে দণ্ডায়মানা আর ডানদিকের নীচে লাল পদ্মের উপর আসীন সিদ্ধিদাতা গণেশ। তার গাত্র বর্ণ গাঢ় গোলাপী, মাথা সাদা। কপালে তৃতীয় নয়ন রয়েছে। আর গায়ে রয়েছে সাপের উপবীত বা পৈতে।
মায়ের বামে শ্বেত পদ্মের উপর বিদ্যার দেবী সরস্বতী লক্ষ্মীর মতই ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিতে দণ্ডায়মানা। নীচে ময়ূরের উপর বসে দেবসেনাপতি কার্তিক।
আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রচলিত দেবী প্রতিমা থেকে আলাদা করেছে এই দেবী প্রতিমাকে, তা হল মায়ের সাথে থাকে মায়ের দুই সখী জয়া আর বিজয়া। চামর হস্তে তারা দেবীমাকে ব্যঞ্জন করছে। একজনের গায়ের বর্ণ সবুজ আর অপর জনের হালকা হলুদ।

মেদিনীপুরের প্রবাদপ্রতিম মৃৎশিল্পী শচীন পাল এই পুজোতেই প্রথম প্রতিমা গড়ার হাতে খড়ি করেন।

এই বছর পুজোর ৮৭ তম বর্ষ। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এই বছর ও করোনা কালীন পরিস্থিতিতেও পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। আর সেই উপলক্ষে আগামী ১০ অক্টোবর মহাপঞ্চমীতে সন্ধ্যে ৬টায় দুঃস্থদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন বস্ত্র। সেই অনুষ্ঠান আপনাদের স্বাগত।

বর্ষ। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এই করোনা কালীন